বাড়ির দুইদিক ঘিরে ধানক্ষেত। ক্ষেতের ধান কাটা হয়ে গেছে এর মধ্যে। বৃষ্টির জল জমে আছে কাটা ধানের ন্যাড়ার গোরায় গোরায়। বিকেল বেলায় বৃষ্টি হয়ে গেছে এক পশলা। সুনামগঞ্জী স্পেশাল বৃষ্টি। আকাশ মুখ গোমড়া করেই আছে সেই থেকে । একটা তারাকেও ঘেষতে দিচ্ছে না তার বুকে। বৈশাখি মেঘলা রাত। ঘন আঁধার । সুনসান নিরবতা। নিরবতায় ছেদ টানছে অজস্র ব্যাঙ এর কোরাস সংগীত। এক পক্ষ ডাকছে " টিরররররর টিরররর"। আরেক পক্ষ " ক্রোওক ক্রোওক" । অপরূপ সংগীতময় গহন রাত্রি। সুমধুর মূর্ছনা। অবিরত " টিরররর টিরররর ক্রোওক ক্রোওক"। যেনো তারা প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ। কে কতো সুন্দর করে, কতো বেশী কম্পাংকে ডাক ছাড়তে পারে। দেশের সমস্ত ব্যাঙ যেনো জড়ো হয়েছে এখানে। আমার ছোট্ট ঘরের পাশে এক সংগীত মহাসম্মেলনে। বিটোভেন, মোতজার্টরা বেঁচে থাকলে নির্ঘাত লজ্জা পেতেন বাংলাদেশি ব্যাঙদের এমন মধুর ঝংকারে। এ মধুর সংগীত প্রত্যাখ্যান করে ঘুমানো যায়?
এই আমার দেশ। প্রিয় বাংলাদেশ। এখানে জীবন স্পেশাল। প্রকৃতিও স্পেশাল। এখানে বসন্তে কোকিল ডাকে- কুহু কুহু। কোন দুষ্টু বালক তাকে অনুকরণ করে "কুহু" রবে ডেকে উঠলে আর রক্ষা নাই। কোকিলও নেমে পড়ে তীব্র প্রতিযোগীতায়। ছোট্ট দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে " কুহু কুহু" ডেকেই চলে। যেনো পুরো দুনিয়াকে শুনিয়ে প্রমাণ করতে হবে "কুহু" রবে তার শ্রেষ্টত্ব। অনবরত। চলে মানুষ ও পক্ষির তুমুল লড়াই। এখানে রাতে ঘুমোতে যাওয়া ঝিঝি পোকার ছন্দময় অপার্থিব সুরে। আবার ভোরে ঘুম ভাংগে দোয়েল শ্যামার শীষে। কখনও কখনও জানালার গ্রীলে কাঠঠোকরা আর মাছরাংগার টুকুর টুকুর মধুর যন্ত্রণা। একটা দুইটা শালিক কিচিরমিচির করে উঠে জানালার পাশে ছোট্ট আমগাছের শাখায়। আমি ঘুমোতে পারি না। ঘুমোতে চাইও না। সুরের মূর্ছনায় ডুবে থাকতে চাই আকন্ঠ। এমন সুরের দেশে সুরের আহবান প্রত্যাখ্যান করাও পাপ।