অন্তর মম বিকশিত করো

রাঙাচাচা যখন বাড়ীতে অবতরণ করলেন তখন ঘড়ির কাটা রাত দশটা পার করেছে মাত্র। গ্রাম হিসেবে অনেক রাত, বলাই বাহুল্য। গ্রামের মানুষদের বেশিরভাগই এসময় গভীর ঘুমে। আর যারা ঘুমায়নি তারাও ঘুমের প্রস্তুতিতে। ঠিক এমন সময়ে সদলবলে হই হল্লা করে সারা পাড়া মাতিয়ে হ্যাজাক লাইটসহ উপস্থিত হলেন তিনি। এতে কারো কাঁচাঘুম ভাংলো আর কারো ঘুমের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটলো বটে, তবুও রাংগাচাচার প্রতি বিরক্ত হবে এমন মানুষ এ পাড়ায় বিরলই বলতে হবে। পূর্বপরিকল্পিত হলেও এরূপ আগমনকে তাই অবতরণ বলাই শ্রেয়। রাতের খাবার খেয়ে মিশনে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিলো তিয়াস। আজ রাতে " মিশন আলোয়ারা"। খুব অদ্ভুত আর থ্রিলিং একটা ইভেন্ট। আলোয়ারা হলো বিলের ভাসান পানিতে গভীর রাতে হ্যাজাক লাইটের আলোতে কুচ বা টেটা দিয়ে বিদ্ধ করে মাছ শিকার করা।

তিয়াস তার বাবা-মায়ের সাথে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে দু’দিন হলো। অকূল পাথার টাংগুয়ার হাওরটা পশ্চিম দিগন্তে যেখানে আকাশটাকে টেনে নামিয়ে চুবিয়ে দিচ্ছে, তারই মাইলকয়েক দক্ষিণে তাদের গ্রামের বাড়ী। হাওর, বিল আর জল-জলাময় ভাটি এলাকা। বর্ষাকালে বাড়ীর চারিদিকে থৈ থৈ পানি। তিয়াসরা বাড়ীতে বেড়াতে এলে তাদের বিনোদনের জন্য নানারকম আয়োজন করা হয়। বেড়ানোর সময়টা যদি বর্ষাকাল হয় তবে বিনোদনের অংশ হিসেবে থাকে "আলোয়ারা" র আয়োজন। এমনিতে বেড়াতে এসে সময় কাটানোর কোন সমস্যা হয় না তিয়াসের। শহর থেকে আসার সময় কিছু বই সাথে নিয়ে আসে। এগুলো পড়েই সময় কেটে যায় বেশ। তবে আলোয়ারার বিষয়টিতে তার খুব দুর্বলতা। ভীষণ এনজয় করার মতো একটি বিষয়। নৌকার গলুইয়ে সাঁ সাঁ শব্দ করে জ্বলে হ্যাজাক লাইট। হ্যাজাকের আলোতে দেখা যায় বিলের স্বচ্ছ পানির নীচে নানারকম জলজ উদ্ভিদ আর ছোট ছোট জলজ প্রাণী। স্বচ্ছ পানির নীচে হঠাৎ কোন মাছ চোখে পড়লে অমনি কুচ বা টেটা দিয়ে বিদ্ধ করার চেষ্টা। বেশীর ভাগ সময়েই লক্ষ্যভ্রষ্ট, মাছ লেজ ঝাপটিয়ে দৌড়ে পালায়। ইশ ইশ করে আফসোস করা- কি বিশাল বড় ছিলো মাছটা, অল্পের জন্য মিস হয়ে গেলো। আর লক্ষ্যভেদ হলে আনন্দের আর সীমা থেকে না। ছোট্ট মাছ হলেও ধরাধরি করে নৌকায় তোলা। টেটাবিদ্ধ মাছের দাপাদাপি। দারুণ উপভোগ করার মতো একটা বিষয়।

রাঙাচাচা তিয়াসের বাবার কাজিন। এ গ্রামেরই কয়েক পাড়া পর তাদের বাড়ী। বাবার চেয়ে বয়সে কিছুটা বড়। কুচকুচে কালো সুঠাম দেহটি তার পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত নামটির সাথে বেমানান, কোন সন্দেহ নেই। তবে তার ভীষণ আমোদে স্বভাব আর চারপাশের সবাইকে মাতিয়ে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা তার নামের প্রতি কিছুটা সুবিচারেরও দাবী রাখে। শহরের স্কুলে পড়ুয়া ছোট ছোট ভাতিজাদের গ্রামে বেড়াতে আসাটা আনন্দদায়ক করে তোলা তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বাড়ীর উঠোনে পা দিয়েই হুংকারের সাথে তার সদর্প ঘোষণা-

আইজ দ্যাখবা বড় মাছ কারে কয়। তিয়াস, তুমি রেডি আছো তো?

জ্বী চাচা, আমি তৈরী।

সাথে ছাতি লও, যুদি বিষ্টি আসে! পানির বোতল আর কিছু খাওন দাওনও সাথে লও।

বলেই চাচা হ্যাজাক লাইট জ্বালাতে শুরু করে। হ্যাজাক লাইট জ্বালানো এক এলাহী কারবার। লাইটের রিজার্ভারে ডিজেল ভরে পাম্প করতে হয়। এরপর নব ঘুরিয়ে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের মতো একটা পাইপের সুঁচাগ্রসম ছিদ্র দিয়ে ডিজেল পাস করা হয়। সেই ডিজেলে চিমনির ভিতরে নেটের তৈরী বাল্ব আকৃতির একটা জিনিস ভিজে জবজবে হয়। এরপর দেয়াশলাইএর শলায় আগুন জ্বেলে নেটের কাছে ধরলেই তা জ্বলে উঠে। একেবারে বিজলী বাতির মতো আলো। চারিদিক থেকে নানা রকম পোকা মাকড়, ঘাস ফড়িং ভিড় করে সেই আলোকে ঘিরে। কিছু কিছু পোকা অকারণে পুড়ে মরে আগুনে। আর যাদের মরার সাহস বা সুযোগ হয়না, তারা হ্যাজাকের আলোর চারিধার ঘিরে উৎসব করে। পাম্প করা ডিজেল তীব্র বেগে বেরিয়ে যাওয়ার অদ্ভুত সাঁসাঁ শব্দ রাতের নিস্তব্ধতায় এক মোহনীয় সুর তোলে। অবশেষে আলোর ফোয়ারা সে হ্যাজাক লাইট বাড়ীর ঘাটে রাখা নৌকার গলুইয়ে বিশেষ কায়দায় বাঁধা হয়। কুচ, টেটা প্রভৃতিসহ নৌকায় উঠেন প্রধান শিকারী রাঙাচাচা। পিছু পিছু তিয়াস, নৌকা চালক এবং আরো দুজন সহযোগী।

কৃষ্ণপক্ষের এক চিলতে চাঁদ ঝুলে আছে আকাশের এক কোনে। এদিক ওদিক কয়েকটি জ্বলজ্বলে তারা যেনো চাঁদটার একাকিত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করছে। ছোট্ট এক টুকরো সাদা মেঘ মৃদুলয়ে উড়ছে। অনেকটা ধোঁয়ার মতো। রাতের নিঃশ্বব্দতা ভেদ করে বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দে এগিয়ে চলে আলোয়ারার নৌকা। বাড়ীর সামনের সরু খালটা পেরিয়ে অল্পসময়ের মধ্যেই নৌকা এসে পড়ে শইলচাপরা বিলে। বিশাল জলরাশির মাঝখানে আলোয়ারার নৌকায় কয়েকজন মানুষ। চারিদিক নিকষ কালো অন্ধকার। দূরের গ্রামগুলো থেকে জোনাকির আলোর মতো দু’একটা টিমটিমে আলো চোখে পড়ে। এক চিলতে চাঁদ আর তারার আলোয় দিক ঠাহর করে এগুয় নৌকা। গ্রামের দিক থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের হুক্কা হুয়া। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর হ্যাজাকের নিজস্ব শব্দ মিলে তুলেছে এক অপার্থিব সুরের ঝংকার। নৌকার দু’পাশে চোখে পড়ে শাপলা, শালুক আর হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ। দিনের আলোতে দেখা এসব দৃশ্যের সাথে রাতে হ্যাজাকের আলোয় দেখা সীমিত পরিসরের দৃশ্য একেবারেই অন্যরকম। শাপলা, শালুকের পাতায় পাতায় বিভিন্ন রকমের পোকা, ফড়িং, সরীসৃপ বসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। নৌকা চলার শব্দে সতর্ক হয়ে থেকে থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে পালায় ছোট ছোট কোলা ব্যাঙ। একটা দুটা জলচর পাখিও চোখে পড়ে। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত লুকায় ঘন ঝোপের আড়ালে।

ছোট আকারের মাছ গাঁথার জন্য কুচ সুবিধাজনক হাতিয়ার। বড় আকারের মাছের জন্য কুচ যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন টেটা। তাই টেটা হাতে সামনে দাঁড়িয়ে প্রধান শিকারি রাঙাচাচা। তার ঠিক পেছনেই কুচ হাতে দাঁড়িয়ে তিয়াস। ছোট আকারের মাছ, যেগুলো রাঙাচাচা এড়িয়ে যাবেন, সেগুলোতে ঘা বসাবে তিয়াস। চাচা সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন স্বচ্ছ পানির দিকে। মাঝে মাঝে টেটা দিয়ে ইশারায় ছোট ছোট মাছ দেখিয়ে দিচ্ছেন তিয়াসকে। তিয়াস ঘা বসানোর জন্য প্রস্তুত হতে হতেই মাছ ভোঁ দৌড়। মাঝে মাঝে ঘা বসিয়েই বলছে “এইবার মনে হয় গাঁথছে চাচা।“ কিন্তু কুচটা পানি থেকে তুলতেই দেখা যায় ফাঁকা। সবাই মিলে হাসাহাসি। অন্যদিকে, রাঙাচাচা যে বড় মাছের অপেক্ষায় চোখের পলক ফেলছেন না তার আর দেখা মেলে না। যে তিন চারবার টেটা ছুড়েছেন তিনি প্রতিবারই লক্ষ্যভ্রষ্ট। প্রতিবারই চাচার দাবী, ঘা ঠিকই লেগেছে, কিন্তু টেটাটা ভাল নয় বলে গাঁথে নি। কি বিশাল আইড়, কি বিশাল বোয়াল, কি বিশাল রুই বলে বলে আফসোস।

হঠাৎ ঝপাস শব্দে কুচ নিক্ষেপ। এবার তিয়াস। নির্ভুল লক্ষ্যভেদ। হ্যা, গেঁথেছে। বিশাল সাইজের বোয়াল, কোন সন্দেহ নাই। ভীষণ এক্সাইটেড লাগছে তিয়াসের। সফল লক্ষ্যভেদ। সবাই মিলে টানাহেঁচড়া করে সেই মাছ তোলা হলো নৌকায়। দেখা গেলো যতটুকু বিশাল মনে হয়েছিলো ততো বিশাল নয়। বোয়ালের বাচ্চা। বড়জোর এককেজি ওজন হবে। তবুও নিজের শিকার করা সেই মাছ নিয়ে আহ্লাদিত হতে পারতো সে। বাঁধ সাধল একটা জাল। মাছটাকে যখন নৌকায় তোলা হলো তখন দেখা গেলো প্রায় অদৃশ্য সুতোর একটা জাল জড়িয়ে আছে মাছটিকে। অর্থাৎ মাছটি তিয়াসের কুচে বিদ্ধ হবার আগেই কোন এক জেলের পাতা কারেন্টের জালে আটকা পড়ে ছিলো। সেই হিসেবে মাছটির দাবীদার হলো সেই জেলে। তিয়াসের মন সায় দিচ্ছিল না। সে রাঙ্গাচাচাকে অনুরোধ করে মাছটিকে জালে জড়িয়ে আবার পানিতে রেখে দিতে। রাঙাচাচা তার অনুরোধে কান দেয় না। বলে “তোমার কুচে লাইগ্যা পরে জালে লাগছে, কাজেই মাছটা তুমিই ধরছো।“ অনেক পীড়াপীড়ি করেও লাভ হয় না। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে রণে ভঙ্গ দেয় তিয়াস। এক অদ্ভুত অপরাধবোধ আচ্ছন্ন করে তাকে। ভীষণ মন খারাপ হয় তার।

ইতোমধ্যে নৌকা জাল ছেড়ে অনেকটা দূর এগিয়েছে। রাঙাচাচার ধুমপান করার ইচ্ছে হলো। নৌকাটিকে ঝোপের পাশে ভিড়ানোর নির্দেশ দিলেন। ঝোপের আড়ালে একটা ছোট ডিঙ্গি নৌকা চোখে পড়ে। নৌকার মাচায় চাদরে মুখ ঢেকে বসা লোকটিকে চাচা জিজ্ঞেস করে-

কেডা এইহানে?

ভাই, আমি ইসলামুদ্দি।

ইসলামুদ্দি? তুমি এইহানে কি করো? জাল পাতছো? এই রাইতের বেলা?

হ ভাই, দিনের বেলা পাহারাদাররা খুব যন্ত্রণা করে। দেখলেই জাল তুইল্যা লইয়া যায়। অভাবের সংসার। আর কুনু কামকাজের ব্যবস্থা নাই। রাইতের বেলা লুকাইয়া মাছ ধরি। যা কামাই অয় তাতে চইল্যা যায় কুনুমতে। কয়দিন আগে জাল নিয়া গেলো পাহারাদার। সুদের উপরে টেহা আইন্যা আবার জাল কিনছি। এইবার নিয়া গেলে আর উপায় নাই। এতো বড় সংসার, না খাইয়া মরতে অইবো। তাই জাল পাইত্যা জঙ্গলের মধ্যে লুকাইয়া থাহি।

তিয়াস ইসলামুদ্দিকে জিজ্ঞাসা করে- পাহারাদার জাল নিয়া যায় কেনো?

ওমা, নিবো না? ইজারাদার সরকারের কাছ থাইক্যা বিল ডাইক্যা আনে। তাদের ডাইক্যা আনা বিলে অন্য কেউ মাছ ধরলে মানবো? এর লাগ্যাই তো পাহারাদার বসাইছে, অন্য কেউ যাতে মাছ ধরতে না পারে।

একটানে বলে যায় ইসলামুদ্দি। এরপর প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে-

তুমি ইঞ্জিনিয়ারের পোলা বুঝি বাজান? মাশাল্লাহ, অনেক বড় হইয়া গ্যাছো। আল্লাহ তোমারে অনেক বড় করুক।

তিয়াস প্রসঙ্গেই থাকে। ক্ষণিক অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। ইসলামুদ্দির দোয়া তার কানে পৌছায় না। দেশের এককোনে সীমান্ত জনপদের এই অজপাড়াগাঁয়ে প্রকৃতি প্রদত্ত বিশাল জলরাশি। এ দুর্গম প্রান্তরেও সরকার বাহাদুরের সক্রিয় উপস্থিতি? তার কাছে মনে হয় সরকার বাতাসের মতো সর্বগামী। যেখানেই বাতাস সেখানেই সরকার। তা না হলে, এই গরীব ইসলামুদ্দির সামান্য জীবিকায় সরকার উপস্থিত না হলে কী এমন ক্ষতি হতো? শংকিত হয়ে সে জিজ্ঞাসা করে-

তাহলে তো আমাদেরও নৌকা, হ্যাজাক সবকিছু পাহারাদার ধরে নিয়ে যেতে পারে? আমরাওতো অবৈধভাবে মাছ ধরতে এসেছি।

কী যে কও বাজান। তোমরারে কিছু কইবো না। তোমরা হইলা গিয়া শহরের ভদ্দরলোক মানুষ। গেরামে আইস্যা শখ কইরা মাছ ধরতে আইছো। তাছাড়া গেরামে তোমাদের কত খাতির। তা, মাছ কিছু পাইছো বাজান?

রাঙাচাচাই উত্তর দেয়- না, মাত্র একটা ছুডু বোয়াল। কয়েকটা বড় মাছ পাইছিলাম। টেটা ভালা না, তাই বিন্ধে না। তাছাড়া, এইবার বিলে মাছও কম। অকাল বন্যায় ধানের যে পঁচা রোগ হইছে, তাতে বেশিরভাগ মাছই মইরা গেছে।

এরপর উপরে মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে- আসমানও দেখছি খারাপ করতাছে। মেঘ আইবো মনে অয়। বাড়িত যামু গা। আইজ আর কাম অইবো না।

মাছ না নিয়া গেলে আমার বাজানের ইজ্জত থাকবো? এক কাম করো, আমার জালে বড় একটা বোয়াল ধরা পড়ছে। তুমরা নিয়া যাও।

বলেই ইসলামুদ্দি তার ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকার মাচার নীচ থেকে একটা বেশ বড় সাইজের বোয়াল বের করে চালান করে দিলো তিয়াসদের নৌকায়। চাচা জিজ্ঞেস করে-

দাম কত?

কি কও ভাই? ইঞ্জিনিয়ারের পোলা। খালি তোমারই ভাতিজা? আমার ভাতিজা না? আমার ভাতিজারে একটা মাছ দিয়া দাম নিমু? আমি গরীব হইতে পারি, আমার মনডাও কি গরীব?

না, আমি কইতাছি মাছ দিয়া দিলে বেচবা কি? পরিবাররে খাওয়াইবা কি?

রিজিকের মালিক আল্লাহ। রিজিকে থাকলে আরো অনেক মাছ ধরা পড়বো। না পড়লে নাই। আসমান অনেক খারাপ করছে। তুমরা অহন বাড়ীত যাওগা। মেঘ আইলে আবার বাবাজি ভিইজ্যা যাইবো।

আকাশ মুহূর্তের মধ্যে কালো হয়ে সব তারা ঢেকে দিলো। হু হু করে বাতাস বইছে। স্থির পানিতে ছোট ছোট ঢেউ দেখা দিচ্ছে। তাদের নৌকা দ্রুতবেগে ছুটে চলছে বাড়ীর দিকে। বৃষ্টি নামার আগেই বাড়ী ফেরার তুমুল চেষ্টা। অন্যরাও হাত লাগিয়েছে নৌকা চালাতে। তিয়াসের সেই দিকে খেয়াল নেই। তার কানে শুধুই বাজছে ইসলামুদ্দির কণ্ঠস্বর “আমি গরীব হইতে পারি, আমার মনডাও কি গরীব?” তিয়াসের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো নৌকায় রাখা ছোট্ট বোয়ালটার দিকে তাকিয়ে। ইসলামুদ্দির জাল থেকে তুলে আনা সামান্য একটা ছোট্ট মাছ। কত দাম হবে? বড়জোর একশ টাকা! তবুও লোভ সামলানো গেলো না। অথচ সেই ইসলামুদ্দি কত অবলীলায় তার সারারাতের রোজগার, সবচেয়ে বড় মাছটা…… । মনের দিক থেকে নিজেকে ইসলামুদ্দির থেকেও গরীব মনে হচ্ছে। এক তীব্র গ্লানি গ্রাস করছে তিয়াসকে। ভীষণ রাগ হচ্ছে রাঙাচাচার প্রতি। মনে মনে সে প্রতিজ্ঞা করে, এই মাছ সে স্পর্শও করবে না। আসবে না আর কোনদিন আলোয়ারাতে। সে কেবলই চাচ্ছে, বাড়ীতে পৌছার আগেই যেন বৃষ্টি নামে অঝোর ধারায়। বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা ধুয়ে মুছে দিক তার হৃদয়ের সমস্ত গ্লানি। বৃষ্টির নিখাদ পানিতে স্নাত হয়ে বিকশিত হোক তার অন্তর।